২১ অক্টোবর ২০২০, বরিশালের হৃদয়ে এক অনন্য দৃশ্যের জন্ম হয়েছিল। অশ্বিনী কুমার হলের সামনে, সদর রোডের ব্যস্ততম এলাকায়, জনসচেতনতা এবং প্রতিবাদের এক নিরব কিন্তু গভীর কর্মসূচি পালন করে টিম বিবিডিসি । ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে তারা আয়োজন করেছিল এক মৌন মানববন্ধন, যেখানে শব্দের পরিবর্তে প্রতিবাদ ছিল চোখে, পোস্টারে এবং উপস্থিতিতে। টিম বিবিডিসির এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পোস্টারগুলোর ভাষা ছিল আবেগময়, প্রশ্নবিদ্ধ এবং প্রতিবাদী— “নারী কেন নিরাপদ নয়?”, “ধর্ষকের ফাঁসি চাই”, “চুপ থাকলে আরেকটি ধর্ষণ হবে”, “আমি স্বাধীনতা চাই না, আমি নিরাপত্তা চাই” ইত্যাদি। জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই যেন মৌনতা হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। ২০২০ সালের এই সময়টায় দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের একের পর এক ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। সিলেট, নোয়াখালীসহ নানা স্থানে ভয়াবহ ও অমানবিক ঘটনার খবর প্রতিনিয়ত হতবাক করে দিচ্ছিলো সবাইকে। এই অবস্থায় টিম বিবিডিসি সিদ্ধান্ত নেয় শুধুমাত্র রক্তদান নয়, সামাজিক সচেতনতার জায়গাটিতেও নিজেদের ভূমিকা রাখতে হবে।
এই মৌন মানববন্ধন ছিল তাদের তরফ থেকে সমাজের প্রতি একটি কঠোর বার্তা— চুপ থাকা আর না, এখন সময় একসাথে দাঁড়ানোর। স্থানীয় মানুষজন, পথচারী, এমনকি আশেপাশের দোকানদাররাও থমকে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। কেউ কেউ ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন, কেউ কেউ এসে ধন্যবাদ জানান এই সাহসী উদ্যোগের জন্য। সামাজিক মাধ্যমে মানববন্ধনের ছবি ও বার্তা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। বরিশালের গণ্ডি পেরিয়ে, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও মানুষ প্রশংসা জানায়। এই উদ্যোগ যেন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়— যুব সমাজ যদি চায়, তবে ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন সম্ভব শব্দ ছাড়াও। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কেবল নারীর কাজ নয়, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। টিম বিবিডিসির এই মানববন্ধন প্রমাণ করেছে— রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি, সচেতনতা ছড়িয়ে সমাজ বদলানোর কাজও তারা করতে প্রস্তুত। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য এক শক্ত বার্তা— প্রতিবাদই বদলের সূচনা, আর সেই প্রতিবাদ শুরু হতে পারে মৌনতায়ও।